
ঢাকা, ১৩ জুন —
জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্তকে ‘জুলাইয়ের শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, শুধু একটি রাজনৈতিক দলকে খুশি করতেই এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দেশের জনগণের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
শুক্রবার (১৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “সংস্কার আর বিচারকে পাশ কাটিয়ে সরকার যে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, তা ১৮ কোটি মানুষের নির্বাচন হতে পারে না। এর মাধ্যমে নতুন করে ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে। জনগণ আবারও গণঅভ্যুত্থানে যেতে বাধ্য হবে।”
বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে লন্ডনের হোটেল ডরচেস্টারে অনুষ্ঠিত দেড় ঘণ্টার বৈঠক প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, “এ বৈঠকের সঙ্গে দেশের মাটি ও মানুষের কোনো সংযোগ নেই। দেশবাসীর প্রত্যাশা এতে পূরণ হয়নি।”
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন, অনিশ্চয়তা কেটে গেছে এবং আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে এনসিপির মতে, এই সিদ্ধান্ত দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক সংকট ডেকে আনবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে আগামী রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন এবং জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এই সময়ে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষপাতী। জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ২০২৬ সালের রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তবে এনসিপি নেতারা এই আলোচনাকে স্বচ্ছ ও জনসম্পৃক্ত না বলে দাবি করছেন। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “বিদেশের মাটিতে বসে একটি দলের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে বৈঠক গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। মৌলিক সংস্কার ও বিচার ছাড়া এই নির্বাচন অর্থহীন।”
তিনি আরও হুঁশিয়ার করে বলেন, “বিচার ও কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া এনসিপি নির্বাচনে অংশ নেবে না।”
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “নির্বাচনের সময় নির্ধারণের আগে শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। একক সিদ্ধান্ত অশনি সংকেত।”
অন্যদিকে, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “সংস্কারের পদ্ধতি এখনো নির্ধারিত হয়নি। এর আগেই গণভোট খারিজ করা প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ।”
সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে একটি সর্বজনীন ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।