
লন্ডন, ১১ জুন:
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিচারের দায়িত্ব নিজ হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁর একার নয়, বরং এটি একটি অর্পিত দায়িত্ব। লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি এই সিদ্ধান্ত নিজে নিইনি। যারা আমাদের এই দায়িত্ব নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তারা মূলত তিনটি স্পষ্ট দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পণ করেন। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।”
সংলাপে আরও এক প্রশ্নে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বাংলাদেশ কীভাবে অর্থনীতিকে পরিচালনা করছে— সে বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, “এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি সামাল দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে নেগেটিভ। অতীত সরকারের ঋণ ও মেগা প্রকল্পের কারণে প্রতিনিয়ত বিপুল অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।”
তিনি আরও জানান, সরকারের সদ্যপ্রকাশিত শ্বেতপত্রে বিগত ১৭ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। “এই পাচারকৃত অর্থই আমাদের রিসোর্স হ্রাসের মূল কারণ,” বলেন তিনি।
ব্যাংক খাতের দুর্নীতি নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “পূর্ববর্তী সরকার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিজেদের লোক বসিয়েছিল এবং রাজনৈতিক পরিচিতদের উদ্দেশে বিনা চুক্তিতে লোন প্রদান করেছিল। এসব লোন আজ আমাদের শোধ করতে হচ্ছে।”
তবে অর্থনীতিতে আশার আলো দেখছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, “বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিনিয়ত রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়ছে, যা আমাদের পেমেন্ট ব্যালেন্সকে সহায়তা করছে।”
এর আগে সকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাওয়েল। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, বাংলাদেশের পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধার, রোহিঙ্গা সংকট, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।