
লন্ডন, ৮ জুন ২০২৫ — কোভিড-১৯ মহামারির পাঁচ বছর পার হলেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না। শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই নন, মহামারির সময়ে জন্ম নেওয়া ও শৈশব কাটানো শিশুরাও পড়েছে মানসিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মুখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শৈশবের এই ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা আগামী প্রজন্মের ওপর ফেলতে পারে গভীর ও স্থায়ী প্রভাব।
বিবিসির শনিবার (৭ জুন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সাংবাদিক ও বিজ্ঞান লেখক ক্যাথারিন গ্যামন এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিস্কুল শিক্ষক রেবেকা আন্ডারউডের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে, যিনি লক্ষ্য করেছেন—২০২৫ সালের শিশুরা অনেক বেশি সংবেদনশীল ও সতর্ক। অনেক শিশুরই জোরে শব্দ সহ্য করার ক্ষমতা কম। এমনকি আন্ডারউডের স্কুলে সংগীত ক্লাস বন্ধ করে দিতে হয়েছিল, কারণ বাদ্যযন্ত্রের শব্দে শিশুরা আতঙ্কিত হতো।
এই শিশুরাই ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় সদ্যজাত ছিল। বিশ্বজুড়ে স্কুল বন্ধ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, ঘরবন্দি জীবন এবং অনলাইন শিক্ষার বাস্তবতা তাদের জন্য ছিল নতুন ও অস্বাভাবিক। লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা হারিয়েছে খেলাধুলা, পার্টি, বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা এমনকি স্কুল গ্র্যাজুয়েশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শৈশবকালীন অভিজ্ঞতা মানুষের মানসিক বিকাশ ও সামাজিক দক্ষতার ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের গঠন, আচরণ ও সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্য এসব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। তাই মহামারিকালীন একঘরে থাকা, নিয়মিত রুটিনের অভাব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা শিশুদের মানসিক বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২১ সালে স্কুল খুলে দেওয়ার পরপরই শিক্ষকরা লক্ষ্য করেন, অনেক শিশু সহপাঠীদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মিশতে পারছে না, সহজেই উদ্বিগ্ন বা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু উন্নতি হয়েছে, তবুও শিক্ষকদের মতে শিশুরা এখনও আগের মতো স্বাভাবিক আচরণে পুরোপুরি ফিরে আসেনি।
রেবেকা আন্ডারউড মনে করেন, শিশুদের জীবনে সংগীত, খেলাধুলা এবং সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এসব অভিজ্ঞতা না থাকলে তাদের মানসিক স্থিতিশীলতাও বিঘ্নিত হয়। তাই স্কুলগুলো এখন ধীরে ধীরে এসব কার্যক্রম ফের চালু করতে উদ্যোগ নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মহামারির প্রভাব শিশুদের সামাজিক দক্ষতা, আচরণ ও মানসিক স্বাস্থ্য—সবকিছুর ওপরই স্পষ্টভাবে পড়েছে। তবে এই প্রভাব কতটা স্থায়ী হবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক দশক।