
ঢাকা, ৬ জুন ২০২৫ — রাখাইন রাজ্যের জন্য বাংলাদেশ করিডোর দিয়েছে— এমন অভিযোগকে “সর্বৈব মিথ্যা” ও “চিলে কান নিয়েছে” গল্প বলে উড়িয়ে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (৬ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার। বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কিছু গোষ্ঠী বারবার এমন গুজব ছড়াচ্ছে। এই অপপ্রচারে কান দেবেন না। আমরা আমাদের দায়িত্বপথ থেকে বিচ্যুত হবো না।”
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চে ঢাকা সফরের সময় রাখাইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি ত্রাণ করিডোরের প্রস্তাব দেন, যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে সহায়ক করতে পারে। তবে এটি এখনো কেবল প্রস্তাব পর্যায়ে রয়েছে। কোনো বাস্তবায়ন হয়নি, তাই ‘করিডোর দিয়ে দেওয়া হয়েছে’— এই দাবি ভিত্তিহীন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের অগ্রগতি তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন রোহিঙ্গা সংকট প্রায় আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে হারিয়ে যাচ্ছিল। আমরা আবার এটিকে বিশ্বের নজরে আনতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরের সময় পরিষ্কারভাবে বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র স্থায়ী সমাধান হলো প্রত্যাবাসন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। মিয়ানমার সরকার সম্প্রতি ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছে যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে তারা ‘প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এছাড়া তিনি জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি দেশটির বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গেও বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রক্ষা করছে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে ড. ইউনূস রাখাইন করিডোর সংক্রান্ত গুজবের জোরালো প্রতিবাদ জানান এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের কূটনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘোষণাগুলো আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারের নীতি ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে জনমনে আস্থা তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।