ভূমিকম্পে তিন জেলায় মৃত্যু বেড়ে ১০

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১০ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও, তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহত ১০ জনের মধ্যে নরসিংদীতে ৫ জন, ঢাকায় ৪ জন ও নারায়ণগঞ্জে ১ জন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন, ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাফিউল ইসলাম (২০), ব্যবসায়ী আবদুর রহিম (৪৮), তার ছেলে আবদুল আজিজ ওরফে রিমন (১২) এবং নিরাপত্তাকর্মী মাকসুদ (৫০)। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নিহত হয় ১০ মাস বয়সী ফাতেমা; নরসিংদীতে শিশু ওমর ফারুক (১০), তার বাবা দেলোয়ার হোসেন (৪০), ফোরকান মিয়া (৩৫) এবং বৃদ্ধ কাজেম আলী (৭৫) ও নাসির উদ্দীন (৬৫)।

গতকাল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে ঢাকার অদূরে নরসিংদীর মাধবদীতে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর উৎপত্তিস্থল। ভয় আর আতঙ্কে ছুটোছুটি করেন বহু মানুষ। এর মাঝেই ঘটে যায় হতাহতের ঘটনাও।

ভূমিকম্পের সময় বংশালের কসাইটুলি এলাকায় একটি ভবনের রেলিং ধসে পড়ে এক শিশুসহ তিনজন নিহত হন। তারা হলেন রাফিউল ইসলাম (২০), ব্যবসায়ী আবদুর রহিম (৪৮), তার ছেলে রিমন (১২)। আহত হয় বেশ কয়েকজন। মুগদা মদিনাবাগে নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে পড়ে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মাকসুদ (৫০) নিহত হন। নিহতের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলায়। এতে আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামে মাটির ঘরে দেয়াল ধসে নিহত হয়েছেন বৃদ্ধ কাজেম আলী ভূঁইয়া। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে হার্ট অ্যাটাকে ষাটোর্ধ্ব আরও এক বৃদ্ধ নাসির উদ্দিন মারা যান। এছাড়াও সদর উপজেলার গাবতলী এলাকায় বহুতল ভবনের দেয়াল ধসে পাশের টিনশেড বাড়িতে পড়ে তিনজন আহত হয়। এদের মধ্যে দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হলে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারায় শিশু ওমর এবং তার বাবা দেলোয়ার হোসেন। এছাড়াও, শিবপুরে গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় ফোরকান মিয়ার।

অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জে দেয়াল ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়। ভূমিকম্পের সময় ঘটনাস্থলে হয়ে ভুলতা গাউছিয়া যাওয়ার সময় সড়কের পাশের দেয়াল ধসে ফাতেমা, তার মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগমের ওপর পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলেই শিশুটি মারা যায়। 

এদিকে, ঢাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার মো. সালাহ উদ্দীন-আল-ওয়াদুদ এক বিজ্ঞপ্তিতে ভূমিকম্পে ১৪টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন। সেগুলো হলো—

১. মালিবাগ চৌধুরীপাড়া (১টি)

২. আরমানিটোলা (১টি)

৩. স্বামীবাগ, সূত্রাপুর (১টি)

৪. বনানী (১টি)

৫. কলাবাগান (১টি)

৬. বসুন্ধরা (১টি)

৭. নর্দ্দা (১টি)

৮. দক্ষিণ বনশ্রী (১টি)

৯. মোহাম্মদপুর (১টি)

১০. খিলগাঁও (১টি)

১১. বাড্ডা (১টি)

১২. সিপাহীপাড়া, খিলগাঁও (১টি)

১৩. মধুবাগ, মগবাজার (১টি)

১৪. হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (১টি)

প্রসঙ্গত, আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, যার গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। অপরদিকে, মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে এর তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *