
বাজারের কোলাহল আর মানুষের ভিড় উপেক্ষা করে একটি সাদা বক নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে থাকে দোকানের সামনে। কিছুক্ষণ পর সেটি দোকানের ভেতরে ঢুকে দোকানদার মো. হেমায়েত উদ্দিনের (৩৮) পাশে গিয়ে বসে—যেন বহু দিনের সঙ্গী সে। এমন দৃশ্য দেখা যায় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নুরাইনপুর বাজারে।
দোকান মালিক হেমায়েত উদ্দিন নুরাইনপুর গ্রামের বাসিন্দা। প্রায় চার বছর ধরে তিনি বাজারের মসজিদের সামনে স্টেশনারির দোকান চালান। গত চার মাস ধরে তার দোকানেই বসবাস করছে বকটি।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, নুরাইনপুর বাজার সংলগ্ন খানবাড়ির একটি বকের বাসা থেকে চার মাস আগে ঝড়ে পড়ে একটি বকের ছানা। তখন একটি গুইসাপ সেটিকে আক্রমণ করলে স্থানীয় ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিন এগিয়ে গিয়ে ছানাটিকে উদ্ধার করেন। এরপর নিজের সন্তানের মতো যত্নে পরিচর্যা করে সুস্থ করে তোলেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বকটি কখনো দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, কখনো দোকানের ছাউনিতে গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ পর আবার হেমায়েত উদ্দিনের চেয়ারের হাতলে এসে বসে পড়ে। মানুষের উপস্থিতিতে কোনো ভীতি নেই তার। দোকানের কোনো জিনিস নষ্ট করে না; এমনকি নির্দিষ্ট জায়গায় মলত্যাগ করে—যেন নিয়মশৃঙ্খলা জানা পরিবারের এক সদস্য।
হেমায়েত উদ্দিন বলেন, “বকটি পাওয়ার পর থেকে কখনো বেঁধে রাখিনি। সবসময় দোকানের আশপাশেই থাকে, দূরে যায় না। ক্ষুধা পেলে আমি বুঝতে পারি—টুপি বা পাঞ্জাবি ধরে খুনসুটি করে। তখন মাছ দিয়ে খাওয়াই। ছোট মাছ কিনে ফ্রিজে রেখে দিই, পরে নরমাল করে খাওয়াই। কখনো নিজেই জাল ফেলে মাছ ধরে আনি। অসুস্থ হলে নাপা ট্যাবলেট খাওয়াই—তাতে ভালো হয়ে যায়। শিশুর মতো যত্ন নিতে হয় ওকে। রাতে দোকানেই থাকে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. খলিল বলেন, “মানুষ আর বকের এমন বন্ধুত্ব আগে দেখিনি। প্রতিদিন বাজারে এলে বকটিকে হেমায়েতের দোকানে দেখা যায়। ওর যত্ন নেওয়ার ধরনটা সত্যিই অবাক করার মতো।”