শাশুড়ির ১২ লাখ টাকার কিলারে খুন হন সালমান শাহ!

ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়কদের মধ্যে এখনো তাকে সহজে আলাদা করা যায়। যার অভিনয় ও স্টাইলে এখনও মুগ্ধ বর্তমান প্রজন্মের দর্শকেরা। ক্যারিয়ারের সময়সীমা মাত্র চার বছর, আর তাতেই হয়েছিলেন খ্যাতিমান। বলছি ঢাকাই সিনেমার ক্ষনজন্মা নক্ষত্র সালমান শাহের কথা। 

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে বিস্মিত করে না ফেরার দেশে চলে যান নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর এত বছর পরও দর্শক হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন ঢালিউডের হার্টথ্রব নায়ক সালমান শাহ। 

চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর রাতটি ছিল এক নির্মম, পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের মঞ্চ। নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সে রাতের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন সালমান শাহ হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি রেজভি আহমেদ ফরহাদ।

দীর্ঘ ২৯ বছর পর অভিনেতা সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়। এরপরই নতুন করে আলোচনায় দীর্ঘ ২৮ বছর আগে ১৯৯৭ সালের রেজভীর দেয়া একটি জবানবন্দি।

ওই জবানবন্দিতে রেজভী সালমান শাহর হত্যার দায় স্বীকার করে বলেন, আমরা সালমান শাহকে হত্যা করেছি। হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে সাজানো হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে সামিরা ও তার পরিবারসহ অনেকে জড়িত। হত্যাযজ্ঞে আমিও ছিলাম।
 
১৯৯৭ সালের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে রেজভী জানান, সালমান শাহর মৃত্যু ছিল ১২ লাখ টাকার এক হত্যার চুক্তি। যে চুক্তি করেছিলেন সালমান শাহর শাশুড়ি লতিফা হক লুসি। এ হত্যা চুক্তিতে আরও ছিলেন বাংলা সিনেমার খলনায়ক ডন, ডেভিড, ফারুক ও জাভেদ।
 
রেজভী বর্ণনা অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলিস্তানের একটি বারে রাত ৮টায় ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদ ও রেজভী দেখা করেন। ওই দিন ছাত্তার ও সাজু নামে আরও ২ জন ছেলে আসে। এরপর ফারুক আসে। ২ লাখ টাকা বের করে জানান সামিরার মা এই টাকা দিয়েছেন। সালমানকে শেষ করার জন্য মোট ১২ লাখ টাকা দেবেন।

কিন্তু ২ লাখ টাকা নিয়ে ফারুকের সঙ্গে ডনের কথাকাটি হলে ফারুক বেরিয়ে যান এবং কিছুক্ষণ পর আরও ৪ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। রেজভী জানান, ফারুক বলেন কাজের আগে ৬ লাখ ও কাজের পরে ৬ লাখ। এরপরই প্লাস্টিকের একটি দড়ি, সিরিঞ্জ, রিভলবার ইত্যাদি গুছিয়ে নেওয়া হয়।
 
হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে রেজভী বলেন, রাত আড়াইটায় সালমান শাহর বাড়িতে যান ডন, ডেভিড, ফারুক, আজিজ ভাই। রিজভীর দাবি, সে রাতে ঘুমন্ত সালমান শাহর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন হত্যাকারীরা। নারকীয় হত্যাযজ্ঞে উপস্থিত ছিলেন সামিরা, সামিরার মা লুসি এবং আত্মীয়া রুবি।
 
ঘুমন্ত সালমানকে ক্লোলোফর্ম দিয়ে বেহুশ করেন সামিরা। কিছুক্ষণ পর সালমান শাহর জ্ঞান ফিরলে সবার শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এসময় সালমান শাহর শরীরে ইনজেকশন পুশ করতে বলেন আজিজ ভাই। সালমানকে হত্যা করার পর সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয়া হয় তার লাশ

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছরে রহস্যজনক মৃত্যু হয় ঢালিউড চিত্রনায়ক সালমান শাহর। এতোদিন এ মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলে উল্লেখ করেছে একাধিকক তদন্ত কমিটি। তবে সব তদন্তেই এড়িয়ে চলা হয়েছে সত্যকে। যে কারণে দীর্ঘ ২৯ বছর পর অভিনেতা সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়।
 
সালমান শাহ হত্যা মামলায় সর্বমোট ১১ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যা মামলায় প্রধান আসামি নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। 

অন্য ১০ আসামি হলেন প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, নায়কের সাবেক শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও  রেজভি আহমেদ ফরহাদ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *