
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের (৭১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার কলাগাছিয়া এলাকায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় মরদেহটি দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। পরে সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা গিয়ে তা শনাক্ত করেন। আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক পদে কর্মরত এই অভিজ্ঞ সাংবাদিককে একদিন ধরে খুঁজে না পাওয়ায় পরিবার বৃহস্পতিবার রাতেই রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল। তার লাশ উদ্ধারের খবরে পরিবারসহ সাংবাদিক সমাজে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন বিভুরঞ্জন সরকার। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তবে মৃত্যুর কিছু সময় আগে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে একটি লেখা পাঠান এবং লেখাটির ফুটনোটে উল্লেখ করেন— “জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।” সেই লেখা শুক্রবার বিকেলেই প্রকাশ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। লেখাটিতে তিনি নিজের জীবনের সংগ্রাম, অসুস্থতা, অর্থকষ্ট এবং সাংবাদিকতার পথচলার নানা অভিজ্ঞতা খোলামেলা ভাষায় তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে পাঁচ দশকের সাংবাদিকতা জীবনের নানা ঘটনা, স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান, পেশাগত সততা, এবং শেষ বয়সে হতাশা—সবই উঠে এসেছে সেখানে।
বিভুরঞ্জন সরকার তার শেষ লেখায় লিখেছিলেন—“সত্য লিখে বাঁচা সহজ নয়।” তিনি তুলে ধরেছেন সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক চাপ, এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা না পাওয়ার বেদনা। লিখেছেন অসুস্থতা ও ঋণের বোঝায় জর্জরিত জীবনের কথা। এমনকি জীবনের নানা ব্যর্থতা, উপেক্ষা আর অবহেলার গল্পও তুলে ধরেছেন সেখানে। সহকর্মীরা বলছেন, বিভুরঞ্জনের মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং দেশের গণমাধ্যমের জন্যও এক বড় ধরনের ক্ষতি। সাংবাদিক মহল মনে করছে, তার শেষ লেখাটি একধরনের আত্মজীবনীমূলক দলিল, যা প্রমাণ করে—সত্যের পথে লড়াই করা একজন মানুষের জীবন কতটা কঠিন হতে পারে।