
গেল বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দলটির বহু নেতাকর্মী দেশ ত্যাগ করে বিদেশে আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ পাড়ি জমিয়েছেন প্রতিবেশী ভারত, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায়। সম্প্রতি বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, কলকাতার এক বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের ভেতরে গোপনে চালু রয়েছে আওয়ামী লীগের একটি পার্টি অফিস। বাইরে থেকে দেখে কেউ বুঝতে পারবে না যে এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়। নেই সাইনবোর্ড, নেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা শেখ হাসিনার ছবি—সবকিছুই সাজানো যেন একটি সাধারণ ব্যবসায়িক দপ্তরের মতো। দলের এক নেতা স্বীকার করেছেন, এটি মূলত বৈঠক ও সাক্ষাৎ-আলাপের জন্য ব্যবহৃত একটি জায়গা, যা বাণিজ্যিক অফিস আকারে রাখা হয়েছে যাতে প্রকাশ্যে পরিচয় না ফাঁস হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ২,৫০০ থেকে ২,৬০০ স্কোয়ারফুট জায়গার এই দপ্তরে একসঙ্গে ৩০-৩৫ জন বসতে পারেন, যদিও বড় ধরনের বৈঠকের জন্য ভাড়া নিতে হয় রেস্তোরাঁ বা ব্যাংকয়েট হল। গত এক বছরে কলকাতা ও আশপাশে অন্তত ৮০ জন সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য, প্রায় ২০০ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তারাও এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই সপরিবারে থাকছেন, আবার কেউ কেউ একসঙ্গে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে রয়েছেন। কেউ কেউ কলকাতা থেকে আবার আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্য দেশে চলে গেছেন।
যদিও বিবিসি কলকাতার এই গোপন পার্টি অফিসের সঠিক অবস্থান প্রকাশ করেনি, তবে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে জোর গুঞ্জন চলছে। দলের নেতারা জানিয়েছেন, অফিসে কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই—যখন প্রয়োজন তখনই কেউ কেউ আসেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর পাশাপাশি অনেকে এখানে থেকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। গোপনীয়তা বজায় রাখতেই অফিসটি এভাবে সাজানো হয়েছে বলে জানান দলীয় নেতারা, তবে এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।