
বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। সাম্প্রতিক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেকটাই নিচু। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও ১৮ বছর বয়সে একজন শিক্ষার্থীর ১১ বছরের শিক্ষা সম্পন্ন হওয়ার কথা, বাস্তবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা শেখার গুণগত বিচারে মাত্র ৬.৫ বছরের সমমানের শিক্ষা অর্জন করতে পারছে। অর্থাৎ, মানের দিক থেকে দেশটি কমপক্ষে ৪.৫ বছর পিছিয়ে। বিষয়টি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত দুর্বলতার গভীর সংকেত দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, কোনো শিশু যদি ৪ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়, তাহলে ১৮ বছরে তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা হবে গড়ে ১০.২ বছর। কিন্তু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা শেখার গুণগত মানের বিচারে মাত্র ৬ বছরের শিক্ষা পাচ্ছে। অর্থাৎ, প্রায় ৪.২ বছরের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতির অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—মূলত শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতা, পাঠ্যক্রমের মান, মূল্যায়ন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা ও শিক্ষকের ঘাটতি। এর ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবর্ষের সংখ্যা অনুযায়ী উত্তীর্ণ হলেও তাদের বাস্তব সক্ষমতা আন্তর্জাতিকভাবে মাত্র সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সমান থেকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হলেও বাস্তবতার মুখোমুখি হতে তারা বাধ্য হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান জানান, “সিলেবাস, মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং শিক্ষকদের মানের ঘাটতি রয়েছে। আমরা এসব উন্নয়নের চেষ্টা করছি। শিখনের ঘাটতি প্রাথমিক স্তর থেকেই চলে আসছে।” তিনি আরও বলেন, “ডিজিটাল শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব হলেও তা একদিনে সম্ভব নয়—এর জন্য সময় ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘাটতি যদি সমাধান না হয়, তাহলে ভবিষ্যতের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গঠনও বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এক গুরুতর হুমকি।