গাজার কিছু এলাকায় ১০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শুরু করেছে ইসরায়েল

ইসরায়েল ঘোষিত তথাকথিত ‘মানবিক কৌশলগত বিরতি’র মাঝেও গাজায় হামলা থেমে নেই। রোববার (২৭ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা সিটি এলাকায় শান্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, একই দিনে ভোর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫ জন ফিলিস্তিনি। এর আগের দিন (২৬ জুলাই) ৭১ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৪২ জন ছিলেন ক্ষুধার্ত, সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষ। শুধু তাই নয়, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মানবিক বিরতি কার্যত একটি প্রতারণামূলক ছল বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।


গাজার পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ইসরায়েলি বাহিনীর ত্রাণ সহায়তা অবরোধের ফলে চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে গোটা অঞ্চল। শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, অনেকেই ক্ষুধার যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছে। ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে, ‘ত্রাণ নিতে’ বলে ফিলিস্তিনিদের একত্র করে তাদের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে—ইসরায়েল ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে লক্ষ্যভেদী হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এই ঘটনাগুলো পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রায় অনুপস্থিত বা হালকাভাবে উপস্থাপিত হলেও, সাহসী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা বাস্তবতা তুলে আনছেন চরম ঝুঁকি নিয়ে।


হাসপাতালগুলোতে তৈরি হয়েছে হৃদয়বিদারক চিত্র। চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক শিশুর শরীরে মাংস বলতে কিছু নেই—শুধু হাড় দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ গাজার এক স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসক নিক মেইনারড জানান, “ক্ষুধার্ত রোগীদের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে আমাদের অনেক সহকর্মী ভেতরে ঢুকে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন।” মানবিক সহায়তা কার্যত অবরুদ্ধ করে, খাদ্যকে অস্ত্র বানিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন চালানোর এই ধারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকরা। তবুও, দুনিয়ার অনেক প্রভাবশালী দেশ এখনো নীরব, আর গাজায় প্রতিদিন চলছে ক্ষুধার্ত একেকটি প্রাণ নিভে যাওয়ার বেদনার গল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *