মাইলস্টোনের ওই ভবনটিতে ক্লাস করত ৭৮৩ শিক্ষার্থী

উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার এক শিক্ষক লিখেছেন হৃদয়বিদারক এক বিবরণ, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেদিনের করুণ অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন—“স্কুল ছুটি হয় ১টায়। আমি ১টা ১-২ মিনিটে স্কাই সেকশনে ঢুকি। দেখি শুধু একটা বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। বাকি সবাই বাসার দিকে চলে গেছে। কিন্তু ছুটি শেষের কয়েক মিনিটেই আমাদের জীবনের সবকিছু বদলে যায়।”

তিনি লিখেছেন, ছুটি পেয়ে শিশুদের ব্যস্ত হয়ে পড়া, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্ববোধ এবং মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে যাওয়া ভয়াল ট্র্যাজেডির কথা। তার ভাষায়, “আমি যাওয়ার পর অভিভাবক আসেনি দেখে কিছু বাচ্চা আবার স্কাই সেকশনে ঢোকে, যাদের আরেক শিক্ষক অন্য সেকশনে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এরপরও ৫-৬ জন বাচ্চা ছিল, যাদের আমরা খুঁজে পাইনি—হয়তো তারা করিডোরে, দোলনায় খেলছিল বা সিঁড়িঘরে ছুটছিল। যারা সেখানে কাকতালীয়ভাবে ছিল, তারাই হারিয়ে গেছে।”



শিক্ষক পূর্ণিমা দাসের বর্ণনায় উঠে আসে ক্লাউড, ময়না, দোয়েল, টিউবরোজ, ওয়াটারলিলি—এই নামগুলো যেন আর এখন শুধু ক্লাস নয়, বেদনার নাম হয়ে গেছে। “ক্লাউড সেকশনে তখন ৮-১০ জন বাচ্চা ছিল। মাহরীন মিস, মাসুকা মিস আর মাহফুজা মিস বাচ্চাদের বের করার চেষ্টা করছিলেন। মাহরীন মিস ও মাসুকা মিসকে আমরা হারিয়েছি। মাহফুজা মিস লাইফ সাপোর্টে।”

তিনি জানান, ময়না ক্লাসে কিছু বাচ্চা আহত হয়েছে, কেউ মারা যায়নি। কিন্তু দোয়েল ক্লাসের একটি শিশুকে আর বাঁচানো যায়নি। পাশের টিউবরোজ ও ওয়াটারলিলি ক্লাসে সবাই সেফ থাকলেও, হায়দার আলী ভবনের করিডোর, দোলনা এবং বাইরে থাকা শিশুদের অনেকে জীবিত ফেরেনি।

“অনেকে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, লাশও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে আয়া রাও ছিলেন। কিন্তু কিছু মানুষ ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন—লাশ গুম করা হয়েছে, এমন অভিযোগ! আমি শিক্ষক, রাজনীতিবিদ না। আমরা বাঁচাতে পারিনি, তাই মরদেহ অন্তত মা-বাবার কাছে পৌঁছানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”



সবশেষে শিক্ষক লেখেন:
“নিহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, আপনাদের বাড়ানোর দরকার নেই। আসুন, আমরা যারা অকালে ঝরে গেল, তাদের জন্য প্রার্থনা করি। আমাদের শিক্ষকদের জন্য, স্টাফদের জন্য, আর সেই নিষ্পাপ ছোট্ট বাচ্চাগুলোর জন্য, যাদের কেউ আর বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করছে না—আজ শুধু প্রার্থনা করি।”

এই লেখাটি শুধু একটি বিবরণ নয়—এটি কান্না, অনুশোচনা, দায়িত্ববোধ আর এক অজানা শূন্যতার দলিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *