
রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপর বিধ্বস্ত হওয়া বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানে নিহত হলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির। সোমবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। পাবনা ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী তৌকির মাত্র এক বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। বন্ধুরা জানাচ্ছেন, তিনি ছিলেন মেধাবী, প্রতিশ্রুতিশীল এবং অত্যন্ত মানবিক একজন মানুষ।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯-এ। আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, যাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনার পর আহতদের দ্রুত রাজধানীর বার্ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সিএমএইচ-এ ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, অনেকের দেহে ৫০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ২ জন শিশু, যাদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বার্ন ইনস্টিটিউটে ২ জন, সিএমএইচে ১১ জন, কুর্মিটোলায় ২ জন, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন এবং উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আরও ২ জন মারা গেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার দুপুর ১টার দিকে, যখন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর F-7 BGI (701) মডেলের একটি প্রশিক্ষণ বিমান আকাশ থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা স্কুলের জুনিয়র সেকশনের ভবনে আছড়ে পড়ে। ওই ভবনে তখন নার্সারি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১০০–১৫০ শিক্ষার্থী ক্লাসে অবস্থান করছিল। বিস্ফোরণের শব্দে চারপাশ কেঁপে ওঠে, মুহূর্তেই ভবনটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর উদ্ধারকর্মীরা একযোগে কাজ শুরু করে। যদি দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু না হতো, হতাহতের সংখ্যা আরও ভয়াবহ হতে পারত। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে—শোক ও আতঙ্কে আচ্ছন্ন উত্তরা এলাকাজুড়ে এখনো বইছে বিভীষিকার বাতাস।