
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর যে বহু প্রতীক্ষিত উদ্যোগ, তাতে এখনও পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি নেই। সর্বশেষ মার্চ মাসে জাতিসংঘ মহাসচিব নিজে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেও ফলাফল শূন্য। প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ কেউ বলতে পারছে না। কক্সবাজারের ঘিঞ্জি ক্যাম্পে আটকে পড়া তরুণ রোহিঙ্গারা তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে মরিয়া। তাদের একটাই চাওয়া—নিজ ভূমিতে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচা। কিন্তু তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ রয়ে গেছে নিষ্প্রভ, কারণ একতাবদ্ধ হয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো স্থায়ী কাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের অনেকে মনে করেন, সংগঠিত হলে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম হবেন। তবে তাদের এ চেষ্টাকে বারবার থামিয়ে দিয়েছে কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী। আগে যারা নেতৃত্বের চেষ্টা করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম মুহিবুল্লাহকে ২০২১ সালে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এসব বাধা সত্ত্বেও ‘রোহিঙ্গা কমিটি ফর পিস অ্যান্ড রিপ্যাট্রিয়েশন’-এর মতো সংগঠন গড়ে উঠেছে, যারা নিরবিচারে প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে কাজ করছে। সংগঠনটির নেতারা সব পক্ষের সহযোগিতা কামনা করছেন এবং জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইনের মধ্য দিয়ে সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে।
কমিটির চেয়ারম্যান দ্বীল মোহাম্মদ স্পষ্টভাবেই বলেছেন, “আমাদের দেশ আরাকান, এই দেশ আমাদের নয়। আমরা আইন মেনে, নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।” একইসঙ্গে রোহিঙ্গা নেতা মাওলানা আব্দুর রহিমও বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানান, যেন আর কোনোদিন এই দুর্বিষহ ক্যাম্পজীবনে ফিরে আসতে না হয়। সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে—একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝে।