জুলাই আন্দোলনের এক বছর: কতটা বদলেছে বাংলাদেশ?

ঢাকা, ১ জুলাই:
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে যে ন্যায়বিচারের দাবিতে শুরু হয়েছিল আন্দোলন, তার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০২৪ সালের ১ জুলাই গড়ে ওঠা ‘জুলাই আন্দোলন’ ছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে একটি ইতিহাসগর্ভ গণআন্দোলনের সূচনা। তবে এক বছর পর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— কতটা এগিয়েছে বাংলাদেশ? বন্ধ হয়েছে কি বৈষম্য? প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা?

২০২৪ সালের ১ জুলাইয়ের উত্তপ্ত দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হয় এই ঐতিহাসিক প্রতিবাদ। “আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই”— এমন স্লোগানে মুখর ছিল শিক্ষার্থীদের কণ্ঠ। আন্দোলনের মূল দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে বাতিল হওয়া কোটা পুনর্বহাল। দেওয়া হয় সরকারের প্রতি আল্টিমেটাম।

৭ জুলাই পালিত হয় ‘বাংলা ব্লকেড’। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন এই কর্মসূচিতে। এর মাঝে বিতর্কিত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা— “মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা না পেলে, রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?”— যা ছাত্রসমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

আন্দোলন চলাকালে রংপুরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছাত্র আবু সাঈদ। এর পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের ওপর চলে দমন-পীড়ন। এরপরও আন্দোলন থামেনি, বরং আরও ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।

২১ জুলাই আদালতের রায়ে কোটা সংস্কার অনুমোদন পায়। কিন্তু আন্দোলন থামে না। ছয়জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিরা ৯ দফা ঘোষণা করেন। আন্দোলনে সাধারণ মানুষ, প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও যোগ দেয়।

৩ আগস্ট ঢাকায় লাখো মানুষের জমায়েতে ‘এক দফা’ ঘোষণা আসে— শেখ হাসিনার পদত্যাগ। দমন-পীড়নের মধ্যেও ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় লংমার্চ। এরপর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দেশত্যাগের খবরে মুখর হয় রাজপথ।

আজ সেই ত্যাগ আর সংগ্রামের এক বছর। আন্দোলনের তরুণ সংগঠক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক শক্তিকে উৎখাত করতে পেরেছি, এটা বড় অর্জন। তবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ এখনো বাকি।”

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “শুধু শেখ হাসিনার নয়, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই ছিল এই আন্দোলন। যদি এ পথে আপস করা হয়, জনগণ সেটি মেনে নেবে না।”

তবে এক বছর পর প্রশ্ন থেকেই যায়— সংস্কার-প্রত্যাশার কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে? নাহিদ ইসলাম বলেন, “বিপ্লবের পর মানুষের মধ্যে যে আশা ছিল, সেটা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে।”

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “আমরা শুধু সরকার বদলানোর কথা বলিনি, রাজনৈতিক সংস্কৃতির রূপান্তরের কথা বলেছি। সেটাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।”

তবুও আন্দোলনের মূল শক্তি— তরুণরাই এখন নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষও আছে তাদের পাশে। সবারই একটাই বিশ্বাস— পরিবর্তন আসবেই। নতুন ইতিহাসের সেই প্রত্যাশা নিয়েই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *