যে ৫ কারণে জিলহজের প্রথম দশক গুরুত্বপূর্ণ


জিলহজের প্রথম দশ দিনের ফজিলত: এক অনন্য ইবাদতের মৌসুম

হিজরি বর্ষপঞ্জির শেষ মাস জিলহজ। এ মাসের তাৎপর্য ও ফজিলত সম্পর্কে কমবেশি সবাই অবগত। বিশেষ করে, জিলহজের প্রথম দশ দিন এমন এক বরকতময় সময়, যা আলেমগণ নেক আমলের এক স্বর্ণালি সুযোগ হিসেবে তুলে ধরেন। অনেকেই মনে প্রশ্ন করেন—রমজান মাসের অন্তর্ভুক্ত না হয়েও এই দশ দিনে এত গুরুত্ব কেন?

আসলে ইসলামী স্কলারগণ একমত যে, জিলহজের প্রথম দশ দিন রমজানের দিনের মতোই ফজিলতপূর্ণ। এমনকি, বহু আলেম জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমলরমজানের শেষ দশকের রাতের ইবাদত–এই দুইয়ের মধ্যে তুলনা করে দেখিয়েছেন কতটা মর্যাদাপূর্ণ এই সময়টি। কুরআন ও হাদীসের আলোকেই তারা এই দশকের মাহাত্ম্য নির্ধারণ করেছেন।

নিম্নে উল্লেখ করা হলো কেন জিলহজের প্রথম দশ দিন এত গুরুত্বপূর্ণ:


১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দিনসমূহ

হাদীসের বর্ণনায় এসেছে, জিলহজের প্রথম দশ দিন হলো পৃথিবীর সর্বোত্তম দিন। হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

“পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জিলহজের এই দশ দিন।”
সহীহ, আল-আলবানি

একটি অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:

“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় দিন হলো জিলহজের প্রথম দশ দিন।”
সহীহ, আল-আলবানি


২. নেক আমলের শ্রেষ্ঠ সময়

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন:

“জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমলের চেয়ে উত্তম আমল আর কোনো দিনে করা যায় না।”
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ থেকেও উত্তম?”
তিনি বললেন, “হ্যাঁ, তবে এমন জিহাদ যা একজন ব্যক্তি নিজের জান-মাল নিয়ে করেন এবং কিছুই ফিরিয়ে আনেন না।”
তিরমিজি


৩. আল্লাহ কোরআনে এই দিনগুলোর শপথ করেছেন

সূরা আল-ফজর এর ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“শপথ দশ রাতের।”

প্রখ্যাত সাহাবী ইবনে আব্বাসইবনে যুবাইর (রা.) ব্যাখ্যা করেছেন, এখানে “দশ রাত” বলতে জিলহজের প্রথম দশ দিন বোঝানো হয়েছে, যা এই সময়ের গুরুত্বকে কুরআনিক প্রমাণে সুস্পষ্ট করে।


৪. সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন—কোরবানির দিন

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

“কোরবানির দিন (১০ জিলহজ) হলো আল্লাহর দৃষ্টিতে বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন।”
আবু দাউদ

এই দিনে কোরবানি প্রদান, সালাত আদায় এবং দোয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভের দুর্লভ সুযোগ পায়।


৫. আরাফার দিনের বরকত ও মাগফিরাত

আরাফার দিন (৯ জিলহজ) হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুকন। এই দিনে হাজীরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন, হজের খুতবা শোনেন এবং আল্লাহর দরবারে অশ্রুসজল চোখে দোয়া করেন।

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত:

“আরাফার দিনে আল্লাহ যত মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, তা অন্য কোনো দিনে দেন না।”
মুসলিম

হজে না গিয়েও এই দিনটির ফজিলত পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন:

“আরাফার দিনের রোযা, আগের বছরের ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।”
মুসলিম


উপসংহার:

জিলহজের প্রথম দশ দিন শুধুমাত্র হজ পালনের জন্য নয়, বরং প্রতিটি মুসলিমের জন্য ইবাদতের এক বিশেষ মৌসুম। এ সময়কে মূল্যায়ন করে বেশি বেশি নামাজ, রোযা, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহমিদ ও সৎকর্মে মনোনিবেশ করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *