
রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে গত বুধবার সন্ধ্যায় (৯ জুলাই) এক নির্মম হত্যাকাণ্ড সারা দেশে আলোড়ন তুলেছে। স্থানীয় ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয় শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে। হত্যার পরও সীমা ছাড়িয়ে যায় নিষ্ঠুরতা—লাশের মুখে থাপড়, লাথি এবং লাশের ওপর লাফিয়ে নাচের ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ইতোমধ্যে সোহাগের পরিবার ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে।
নিহত সোহাগ কেরানীগঞ্জের পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে এবং মিটফোর্ডে ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করতেন। তার বন্ধু মামুন জানান, মঈন নামের এক যুবক কয়েক মাস ধরে সোহাগের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছিল। চাঁদা না দেওয়ায় সোহাগকে কয়েকবার হুমকি দেয় সে। হত্যার দিন সন্ধ্যায় সোহাগকে একা পেয়ে মঈনের নেতৃত্বে ৪-৫ জন নির্মমভাবে পাথর দিয়ে আঘাত করে ও বিবস্ত্র করে ফেলে হত্যা করে। মঈনের বিরুদ্ধে কেমিক্যাল ব্যবসায়ী ও হাসপাতালের স্টাফদের কাছ থেকেও চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি হাসপাতালের কর্মচারী নিয়োগে অর্থের বিনিময়ে সুপারিশ করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ভয়ভীতি এবং রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কেউ সোহাগকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি।
এজাহারে বলা হয়েছে, সোহাগের সঙ্গে আসামিদের পুরনো ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল, এবং এর জেরেই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়। লালবাগ থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাব্বি জানান, অভিযুক্ত মঈন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন এবং দলের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। দলের নেতৃবৃন্দ বলছেন, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তার এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা তাদের বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে ঘটনার ভিডিও, অভিযোগ ও গ্রেপ্তারের পর রাজনৈতিক রং ছড়াতে শুরু করেছে হত্যাকাণ্ডটি। পুলিশের ভাষ্যমতে, তদন্ত চলছে এবং বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। এমন জঘন্য ঘটনাকে ঘিরে সামাজিকভাবে শাস্তির দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ।