
রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড়ে দুপুরে গেলেই চোখে পড়ে বাসের দীর্ঘ লাইন, যেন জিলাপির মতো পাক খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে যানবাহন। পুলিশ ও লাইনম্যান থাকলেও সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। বাসগুলো কচ্ছপগতিতে চলছে, আবার হঠাৎ থেমে অন্যদের পথ আটকে দিচ্ছে। চালক ও হেলপারদের দাবি, তারা ইচ্ছা করে সড়ক দখল করেন না। কিন্তু অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, দিনভিত্তিক ভাড়া এবং গেট পাস (জিপি) নামক চাঁদার টাকা তুলতেই এ বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। চালকদের ভাষ্যমতে, প্রতিটি ট্রিপে ১২ হাজার ৩০০ টাকা খরচ হয়, তার সঙ্গে বেতন ও অন্যান্য খরচ যোগ হলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড় বা পল্টন থেকে প্রতিটি বাসের জন্য ৫৫০ টাকা করে গেট পাস দিতে হয়। এ অর্থ না দিলে রাস্তায় গাড়ি চালানো যায় না। সাধারণ হিসাবে এক রুট থেকেই প্রতিদিন আদায় হয় প্রায় এক লাখ ৩৭ হাজার টাকা, যা বছরে দাঁড়ায় পাঁচ কোটি টাকারও বেশি। রাজধানীতে চলাচল করা প্রায় ৭ হাজার বাস থেকে বছরে আদায় হয় প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। চালকরা জানান, গেট পাস দিলে সার্জেন্টরা সহযোগিতা করেন, মামলা এড়িয়ে যাওয়া যায় এবং দুর্ঘটনা ঘটলেও সমাধান হয়ে যায়। এমনকি এই টাকার ভাগ পায় বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দাবি, এই বিপুল অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ও পরিচালন খরচে ব্যয় হয়। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন। অনেক সদস্যের নিজের গাড়ি না থাকলেও তারা এই চাঁদার টাকা ভাগ পান। নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে সুবিধাভোগী সিন্ডিকেট গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগকে ব্যাহত করছে। ড. মো. সালাহউদ্দিন মনে করেন, গেট পাসের নামে চাঁদাবাজির প্রভাব যাত্রীদের কাঁধে গিয়ে পড়ছে। সরকারের উচিত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে এই জটিল সমস্যার সমাধান খোঁজা এবং প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনা। যাত্রী ও শ্রমিক উভয়েই এর পরিবর্তন চান।