অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের লতিবান এলাকায় রথযাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় ঘুরতে গিয়ে ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী। ১৩ বছর বয়সী ওই কিশোরী ২৭ জুন রাতে বাড়ি না ফিরে কাকাবাড়িতে অবস্থান নেয়। সেখানেই রাতে হামলা চালায় ছয় যুবক। তার কাকাতো ভাইকে বেঁধে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। হুমকি দেওয়া হয়—ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ভয়ে মেয়েটি অনেকদিন কাউকে কিছু জানায়নি। পরে ১২ জুলাই বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি হলে বাসায় নেওয়া হলেও, ১৬ জুলাই সে পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পুরো ঘটনা জানায় পরিবারকে।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকরা খাগড়াছড়ি সদর ও ভাইবোনছড়া এলাকায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেন। ওই রাতেই ভুক্তভোগীর বাবা ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাতেই চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন (৩২), সদস্য ইমন হোসেন (২৫), এনায়েত হোসেন (৩৫), এবং ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন (৩২)। পলাতক দুইজন হলেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ—মুনির ইসলাম ও সোহেল ইসলাম। পুলিশের দাবি, পলাতকদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে কিশোরীর খোঁজখবর নিতে যান জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। বিএনপির পক্ষে তার পরিবারকে এক লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার জানান, “এই ছয়জন আমাদের কেউ নয়। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।” এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নারী অধিকারকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মঞ্জিলা সুলতানা বলেন, “ভিকটিমের বয়স মাত্র ১৩ বছর, আমরা মর্মাহত। দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।” নারী অধিকার সংগঠন ডব্লিউআরএনের প্রতিনিধি নমিতা চাকমা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নারী নিপীড়নের পথ সুগম করছে—এই অবস্থা পাল্টানো এখন জরুরি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *