‘হারুনের ভাতের হোটেল’ বন্ধ হওয়ার দিন আজ

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একসময় ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নামক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যাপক আলোচিত হয়ে ওঠা এই পুলিশ কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। ডিবি কার্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, কনটেন্ট ক্রিয়েটর এমনকি আন্দোলনকারীদের ডেকে এনে আপ্যায়নের নামে আলোচনায় আসা হারুন একে মানবিকতা দাবি করলেও সামাজিক মাধ্যমে তা উপহাসের বস্তুতে পরিণত হয়। ২০২৩ সালে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ডিবি কার্যালয়ে এনে ভাত খাওয়ানোর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন তিনি, যা থেকে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। পরবর্তীতে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম আলুভর্তা ও ডাল পরিবেশন নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানান, আর আন্দোলনকারী ছয় ছাত্রনেতার সঙ্গে ছবি তুলে পোস্ট করায় ক্ষুব্ধ হয় আদালত পর্যন্ত।


হারুন অর রশীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নতুন কিছু নয়। ২০১১ সালে সংসদ ভবনের কাছে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুককে মারধরের অভিযোগে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ও একাধিক বিতর্কে জড়ান। নারায়ণগঞ্জে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যানের ছেলের পরিবারকে বাসা থেকে তুলে এনে মাদক উদ্ধারের দাবি করেন, কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে বিপরীত চিত্র উঠে আসায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। তখনও তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে আবার উচ্চ পদে ফিরে এসে ডিবির উত্তর ও সাইবার বিভাগের নেতৃত্বে আসেন। ডিএমপিতে অতিরিক্ত কমিশনার হওয়ার পর থেকেই বারবার তার কার্যক্রম গণমাধ্যম ও আদালতের নজরে আসে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে এনে আটকে রাখার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হন বলে দলীয় বৈঠকে জানা যায়।


ডিবি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হাস্যকর ও অগ্রহণযোগ্য নানা কর্মকাণ্ডের জন্য গোয়েন্দা বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের ভেতর থেকেই। হিরো আলমের গান গাওয়ার জেরে তাকে আটক, তারপর খাবার বিতর্ক এবং ছাত্রনেতাদের ছবি প্রকাশের মতো ঘটনাগুলো শুধুই মিডিয়া সেনসেশন ছিল না, বরং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ নিয়ে জাতিকে ‘মশকরা’ করার মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে আদালত মন্তব্য করে। আজকের এই দিনে হারুন অর রশীদকে ডিবি থেকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটলেও তার কর্মকাণ্ড থেকে সৃষ্ট আলোচনার রেশ হয়তো এত সহজে থামবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *