সংখ্যালঘু হত্যা-সহিংসতায় সাম্প্রদায়িকতার প্রমাণ পায়নি পুলিশ

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে, ২০২4 সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশে ২৭ জন সংখ্যালঘু নিহত হয়েছেন এবং ১১ মাসে মোট ২ হাজার ৪৪২টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে বাংলাদেশ পুলিশ বলেছে, উল্লিখিত ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতার কোনো প্রমাণ মেলেনি। আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) পুলিশের সদর দফতর থেকে পাঠানো একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অধিকাংশ ঘটনাই জমিসংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক কলহ, অর্থনৈতিক লেনদেন, আত্মহত্যা কিংবা অস্পষ্ট সামাজিক কারণে সংঘটিত হয়েছে। নিহত ২৭ জনের মধ্যে ২২টি ঘটনায় নিয়মিত হত্যা মামলা এবং ৫টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, কেউ ডাকাতির কবলে পড়েছেন, আবার কেউ সন্ত্রাসী বিরোধে প্রাণ হারিয়েছেন।

ঐক্য পরিষদ আরও দাবি করে, গত ১১ মাসে সংখ্যালঘু নারীদের ওপর ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ২০টি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, এসব ঘটনার মধ্যে ১৬টিতে মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে ২৫ জন। তিনটি ঘটনায় অভিযোগই দায়ের হয়নি এবং একটি ঘটনায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি—যেমন রাজশাহীর তানোরে এক আদিবাসী নারী ধর্ষণের অভিযোগ তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। মাগুরার শ্রীপুরেও এমন একটি গণধর্ষণ ও ডাকাতির অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে। পূজামণ্ডপ ও উপাসনালয়কেন্দ্রিক ১২৭টি সহিংসতার ঘটনার মধ্যে ৬৬টি মামলায় ৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মন্দির ভাঙচুর, চুরি, অগ্নিসংযোগ, জমি দখল সংক্রান্ত মোট ৬০টি অভিযোগের মধ্যে অর্ধেকের মতো ঘটনারই বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং বেশ কিছু ঘটনায় মামলা ও গ্রেফতার হয়েছে।

অগ্নিসংযোগ ও জমি দখলের বেশ কিছু অভিযোগ তদন্তে সত্যতা মেলেনি বলেও জানিয়েছে পুলিশ। খিলক্ষেতে রেলওয়ের জায়গায় নির্মিত অস্থায়ী পূজামণ্ডপ উচ্ছেদ করা হয় প্রশাসনের যৌথ সিদ্ধান্তে। বগুড়ার শ্মশানঘাটে পিলার ভাঙার ঘটনায় প্রশাসনের উদ্যোগে পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, প্রতিটি ঘটনাই গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং সব ধর্মীয় ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে, ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, তারা এসব তথ্য ও ঘটনাগুলো পরবর্তীতে সুনির্দিষ্টভাবে খতিয়ে দেখবে এবং নতুন তথ্য পাওয়া গেলে তা জানানো হবে। সাম্প্রতিক অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদন দেশের সংখ্যালঘু নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জনমনে যেমন প্রশ্ন তুলেছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার স্বচ্ছতা নিয়েও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *