রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে ঐকমত্য, হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠনে দ্বিমত রাজনৈতিক দলগুলোর

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে এই ক্ষমতা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, সে বিষয়ে প্রস্তাবিত আইন বা নীতিমালা পরবর্তী সংসদ নির্ধারণ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টায় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ৯ম দিনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ক্ষমতার প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণে একটি আইন প্রণয়ন ও ক্ষমা প্রদর্শন বোর্ড গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়। অধিকাংশ দল এতে সম্মতি দিলেও কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থাকায় তা পরবর্তী সংসদের ওপর ন্যস্ত করা হয়।

বৈঠকে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়েও আলোচনা হয়। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ গঠনের পক্ষে মত দিলেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কিছুটা ভিন্নমত প্রকাশ করা হয়।

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, “রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয়টি অতীতে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ কারণে সংবিধান ও বিচার সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে সংশোধনের সুপারিশ করেছে। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যবহারে আইনগত কাঠামো গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের আগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারের মতামত গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এছাড়া, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ গঠনের বিষয়েও দলগুলো একমত।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের বারবার ক্ষমা করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। এখন আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আনতে আমরা সম্মত।”

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা চাই, কোনও দাগি আসামি যেন ক্ষমা না পায়। তবে সার্কিট বেঞ্চ নয়, বিভাগীয় শহরগুলোতে স্থায়ী হাইকোর্ট বেঞ্চ চাই।”

বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করলে দণ্ডপ্রাপ্তরা এই ক্ষমতার অপব্যবহারে বেরিয়ে যেতে পারে।”

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে শর্তসাপেক্ষে বেঞ্চ গঠনের পরামর্শ দেন।

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “অতীতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনে নানা জটিলতা হয়েছে, যা আইনি কাঠামোর অভাবেই ঘটেছে।”

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, “বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”

বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতায় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ, যদিও পূর্ববর্তী দিনের বৈঠকগুলো নিয়ে কিছু হতাশা ছিল বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *