
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক ঐকমত্য দেখা গেলেও এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো বিভাজন রয়ে গেছে। বিশেষ করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে বিচার বিভাগের সম্পৃক্ততা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ অধিকাংশ দল এই প্রক্রিয়ায় বিচার বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত না করার পক্ষে মত দিয়েছে।
এছাড়া, রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাবেও দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত বিদ্যমান। অনেক দল রাষ্ট্রপতির সম্পৃক্ততাকে ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা হিসেবে দেখছে।
তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে সীমানা নির্ধারণে একটি কমিটি এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি জানান, “প্রতি আদমশুমারির পর সীমানা পুনর্নির্ধারণে একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। আশা করছি চলতি জুলাইয়ের মধ্যেই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিচার বিভাগ বাদ রেখে নতুন কাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। কয়েক দিনের মধ্যে কমিশনে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় বিএনপি বাধা নয়। বরং আমরা শুরু থেকেই কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি এবং বেশিরভাগ প্রস্তাবেই একমত হয়েছি।”
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি বেশিরভাগ দলই সমর্থন করছে না। আমরাও এর বিরোধিতা করেছি, কারণ অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “সীমানা নির্ধারণের জন্য পেশাদার, দক্ষ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা যেতে পারে।”
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “ভারতসহ অনেক দেশেই স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কমিশন রয়েছে। বাংলাদেশেও সেরকম একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের সময় এসেছে।”
উল্লেখ্য, চলমান ঐকমত্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতা হলেও, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন সংক্রান্ত কয়েকটি মূল পয়েন্টে এখনো আলোচনা চলছে।