রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় উত্তাল নগরী: ঐক্যের আহ্বান বিশ্লেষকদের

ঢাকা, ২৩ মে ২০২৫ — রাজনৈতিক অস্থিরতায় উত্তাল দেশের রাজনীতি। নগরজুড়ে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরাও। নির্বাচন ও সংস্কার—এই দুই ইস্যুতে স্পষ্ট বিভক্তি দেখা দিয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে।

একপক্ষে সংস্কার আগে, অন্যপক্ষে নির্বাচন—এই বিরোধকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্টভাবেই বিপরীতমুখী। এরই মাঝে সরকারঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের বিতর্কিত বক্তব্য এবং প্রধান উপদেষ্টার সম্ভাব্য পদত্যাগ নিয়ে জল্পনা-কল্পনায় আরও ঘোলা হয়েছে রাজনৈতিক জল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান সংকট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্য এবং সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনমুখী সুস্পষ্ট পদক্ষেপ।

অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, “বর্তমান সংকটের মূল উৎস সরকারের দায়িত্বহীনতা। সরকার যেখানে প্রয়োজন ছিল রাজনৈতিক সংস্কারে মনোযোগ দেওয়ার, সেখানে তারা বিদেশি কোম্পানির হাতে চট্টগ্রাম বন্দর তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, স্টারলিংক ও এলএনজি আমদানির মতো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছে।”

অপর এক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ পরিস্থিতিকে ‘পরিকল্পিত অস্থিরতা’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, “এই সংকটের পেছনে রয়েছে ভারতের আধিপত্যবাদী কৌশল। লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে অকার্যকর প্রমাণ করে পুনরায় ফ্যাসিবাদীদের ক্ষমতায় আনা।”

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় না হলে তৃতীয় পক্ষ এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। তাই তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানান।

“সরকার যেহেতু এই দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছে, তাই তাদের সবার কথা শুনে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া উচিত,” বলেন অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নিয়ে ড. মাহবুব উল্লাহ সতর্ক করে বলেন, “এ মুহূর্তে পদত্যাগ হলে তা জাতীয়ভাবে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে, যার থেকে সহজে উত্তরণ সম্ভব হবে না।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিচার ও সংস্কারের পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করলেই সংকট প্রশমিত হতে পারে।

তবে মতাদর্শগত বিভাজন থাকলেও জরুরি সংস্কার বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব বলে মত দেন আনু মোহাম্মদ। অন্যদিকে ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, “কেউ যদি শুধু নির্বাচন চায়, কেউ যদি শুধু সংস্কার চায়—এভাবে বিষয়টি তুললে জাতিকে আরও বিভক্ত করা হবে।”

সবশেষে তারা রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, গুজব ও একে অপরের প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব পরিহার করে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *