
ঢাকা, ২৫ মে:
নির্বাচন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবিক করিডরসহ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উঠে এসেছে নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ, প্রশাসনিক প্রস্তুতি এবং জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো।
বৈঠকে রাজনৈতিক নেতাদের পর্যবেক্ষণ
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক নেতারা। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, “প্রধান উপদেষ্টা শুরুতে মনে করেছিলেন, নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে না, তাই তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।” তবে শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠলে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব—এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন এবি পার্টি ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে গণঅভ্যুত্থান নস্যাৎ করতে। মতের পার্থক্য থাকবে—এটা গণতন্ত্রের অংশ, তবে জনগণই ঠিক করবে কোনটা কার্যকর।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “সংস্কার ও অবাধ নির্বাচনের পথে দ্রুত না এগোলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাবে।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ভারতের ভূমিকাকে সন্দেহের চোখে দেখিয়ে বলেন, “ভারতীয় আধিপত্যবাদ এই অর্জন মেনে নিতে পারছে না। সবাইকে তাই সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার মানসিক অবস্থা ছিল ন্যূনগামী, তিনি পদত্যাগের কথা চিন্তা করেছিলেন। সাইফুল বলেন, “মাঝনদীতে মাঝি বদলানো উচিত নয়। আমরা ড. ইউনূসের ওপর আস্থা রাখতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে দলনিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে, মানবিক করিডরসহ জাতীয় সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া উচিত।”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেই তাকে (ড. ইউনূস) যেতে হবে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, অনাস্থার আবহ তৈরি হচ্ছে, যা সরকারের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব বাড়াচ্ছে। সাকি একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছেন এবং বলেছেন, “বিচারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া
নেতাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জানিয়েছেন, সরকারও রোডম্যাপ জরুরি মনে করে। তবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানগুলো আত্মবিশ্বাসী হলেই নির্বাচন ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত হবে।