
প্রতীক ও প্রার্থিতা জানান দিতে প্রার্থীদের প্রচারের প্রধান মাধ্যম ছিল পোস্টার। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক নির্বাচনে তা ছিল গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। তবে পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের কথা বিবেচনায় রেখে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে পোস্টার নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার (২৩ জুন) নির্বাচন কমিশন জানায়, প্রচার মাধ্যম হিসেবে পোস্টারের পরিবর্তে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এজন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি সংশোধনের একটি খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও সতর্ক করে বলেন, “এতে পরিবেশ রক্ষা হবে এবং নানা জটিলতা কমবে। তবে তা হতে হবে সমান সুযোগ নিশ্চিতে।”
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, “নির্বাচন একটি উৎসব। পোস্টার ছিল তার অলংকার। বিকল্প যদি আলোচনা করে ঠিক করা হয়, তাহলে আপত্তি নেই।”
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “বিলবোর্ডের খরচ অনেক বেশি। আর্থিকভাবে শক্তিশালী দলগুলো এতে সুবিধা পাবে। এতে নতুন ও ছোট দলগুলো পিছিয়ে পড়বে।”
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “পোস্টার বন্ধ করে এমন মাধ্যমের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা আরও ব্যয়বহুল। এতে টাকার দৌরাত্ম্য বাড়বে।”
আচরণবিধি সংশোধনের খসড়া
ইসির খসড়া আচরণবিধিতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব আছে:
- দলীয় অঙ্গীকারনামা বাধ্যতামূলক
- গুরুতর অপরাধে প্রার্থিতা বাতিল
- প্রার্থীদের অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ইশতেহার
- সামাজিক মাধ্যমে প্রচার অনুমোদিত, তবে বিদেশি বিনিয়োগ নয়
- নতুনভাবে ‘আর্মস’ ও ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী’র সংজ্ঞা
- ফেস্টুন, ব্যানার, টি-শার্ট, জ্যাকেট ব্যবহার
- সার্কিট হাউজ ব্যবহারে বিধি-নিষেধ
- সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ (৬০ ডেসিবেল)
- জরিমানা তিনগুণ বাড়িয়ে ১.৫ লাখ টাকা
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “চূড়ান্ত করার আগে প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।”
কমিশনের অবস্থান
ইসি জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের পর আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও পরিবেশবান্ধব করতে তারা সময়োপযোগী উদ্যোগ নিচ্ছে বলে দাবি করে সংস্থাটি।
তবে রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, আচরণবিধির যেকোনো পরিবর্তন অংশগ্রহণকারী সব পক্ষের মতামত নিয়ে করা উচিত, যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়।