
স্কুলব্যাগটা হয়তো পুড়ে গেছে নয়তো পড়ে ছিল বেঞ্চের নিচে। বইয়ের পাতাগুলো তখনও স্বপ্নে মোড়া ছিল। কিন্তু সেই ক্লাসরুমে আর ফিরবে না ১৩ বছরের মাকিন সরকার। মাইলস্টোন স্কুলের ৭ম শ্রেণির এই ছাত্রটি ভাবতেও পারেনি, ২৫ জুলাইয়ের সকালটাই হবে তার জীবনের শেষ সকাল। বিমান বিধ্বস্তের করাল ছায়া এক ঝলকে কেড়ে নেয় সেই নিষ্পাপ মুখ, নিভিয়ে দেয় একটি ফুটন্ত ফুলের জীবন। তিনদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে শুক্রবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যায় এই কোমলমতি শিক্ষার্থী। তার শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল—যা তাকে শেষ রক্ষা করতে দেয়নি।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. নাসির উদ্দীন জানিয়েছেন, হাসপাতালটিতে এখন ৫০ জনের বেশি আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তিনি জানান, রোগীদের আলাদা ক্যাটাগরিতে ভাগ করে চিকিৎসা চলছে। ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঘটনাস্থলে এসে চিকিৎসা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ জন রোগীর অবস্থা উন্নতির দিকে, যারা আগামী এক-দুই দিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছুটি পেতে পারেন। এদিকে, হাসপাতাল চত্বরজুড়ে এখন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে—সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং বিমান বাহিনীর সদস্যরা চতুর্দিকে নজরদারিতে রয়েছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে, আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করছে এবং এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো রক্ত বা ত্বক দাতার প্রয়োজন নেই। তবে, দুর্ঘটনার এই নির্মমতা মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ছোট্ট মাকিনের চিরতরে চলে যাওয়া একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে—নিরাপত্তাহীন ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে একটি মর্মস্পর্শী সতর্কবার্তা। এখন একটাই প্রার্থনা—আর কোনো শিশুকে যেন স্বপ্ন নিয়ে স্কুলে গিয়ে ফেরা না অসমাপ্ত থেকে যায়…