
বাবার কপালে চুমু দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেত ছোট্ট মেহেনাজ আফরি হুমায়রা (৯)। কিন্তু এবারের বিদায়টি চিরকালের। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত হয় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মেহেনাজ। তার কফিনে বাবার শেষ চুমু, দাদার হাহাকার আর মায়ের নিস্তব্ধ কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছিল টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়া গ্রামের আকাশ। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে সেখানে দাফনের জন্য পৌঁছায় মেহেনাজের মরদেহ, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত ছিল অশ্রুসিক্ত।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে প্রশিক্ষণ চলাকালীন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান হঠাৎই বিধ্বস্ত হয়ে স্কুলের ভবনে আছড়ে পড়ে। তখনই নিখোঁজ হয় মেহেনাজ। বিকেলে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মরদেহ শনাক্ত করেন বাবা দেলোয়ার হোসাইন। তিনি নিজেই ঐ স্কুলের বাংলা বিভাগের সরকারি প্রভাষক। দুর্ঘটনার সময় তিনি ও তার স্ত্রী সুমি আক্তার দুজনই স্কুলে ছিলেন, কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। দেলোয়ার বলেন, “মেহেনাজকে বলেছিলাম ক্লাস শেষ হলে তোমার মা আসবে নিতে। কিন্তু ক্লাসরুমে ঢুকেই যে বিমানটা ওকে নিয়ে যাবে—এটা জানলে হয়তো স্কুলেই আসতে দিতাম না…”
গত ঈদুল আজহায় বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে গিয়েছিল মেহেনাজ। দাদা আব্দুল বাছেদের সঙ্গে খেলাধুলা, গল্প আর নামাজে যাওয়ার স্মৃতি এখন শুধুই হাহাকার। দাদা বললেন, “আমার দাদু আর কোনোদিন আসবে না! আর আমাকে দাদু বলে ডাকবে না!”
মেহেনাজ ছিল দেলোয়ার-সুমির একমাত্র সন্তান। তার এই অপূরণীয় মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, কেঁদেছে পুরো গ্রাম। নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং শোক প্রকাশে হাজারো মানুষ ছুটে এসেছে বাড়িতে। সেই ছোট্ট কফিন, বাবার কপালে মেয়ের শেষ চুমু আর সবার অঝোর কান্না যেন গেঁথে থাকবে ইতিহাসে এক বেদনার প্রতীক হয়ে।