কোটা রায় থেকে গণআন্দোলন: ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার

ঢাকা, ৫ জুন ২০২৫
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল সংক্রান্ত ২০১৮ সালের সরকারী পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। সেই রায় থেকেই শুরু হয় এক দফায় রূপ নেওয়া এক গণআন্দোলন, যার পরিণতিতে ক্ষমতাচ্যুত হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

২০২৪ সালের ৫ জুন, হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ সরকারী চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর রিট আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী জানান, এর ফলে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবারও কার্যকর হবে।

তবে প্রথমে এটি শুধুই মুক্তিযোদ্ধা কোটার পুনর্বহালের বিষয় হিসেবে দেখা গেলেও ১৪ জুলাই হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা আরও বিস্তৃত হয়। রায়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগে জেলা, নারী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী কোটাসহ সব পূর্ববর্তী কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়। সরকারকে তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারির নির্দেশও দেওয়া হয়।

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগ ১০ জুলাই চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করে এবং ২১ জুলাই চূড়ান্ত রায়ে সরকারি চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা বহাল রাখার নির্দেশ দেয়। তবে এর আগেই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাজপথে নেমে আসে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তোলে। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষে ছয়জনের প্রাণহানির খবর আসে। রংপুরে এক নিরস্ত্র শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।

সরকার কারফিউ, সেনা মোতায়েন, ইন্টারনেট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নানা কৌশলেও আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হয়। বরং দমন-পীড়নের মুখে সাধারণ মানুষও আন্দোলনে যোগ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ আগস্ট ‘একদফা’ দাবিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৫ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে এলে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

ক্ষমতা হারানোর পর শেখ হাসিনার ছেলে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসিকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমাদের কেউ ভাবেনি এই সহিংস আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার উৎখাতের দিকে গড়াবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *