
রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ঠিকানা—আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়—বর্তমানে যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত এক স্মৃতিচিহ্ন। গত বছরের ৫ আগস্ট ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই দশতলা ভবনটি বিক্ষোভকারীদের হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। কোটি টাকার এই ভবনের সব কিছু—দরজা, জানালা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, এমনকি লিফট পর্যন্ত—ধাপে ধাপে খুলে নিয়ে গেছে দখলদাররা ও লুটকারীরা। এখন ভবনটি একরকম পরিত্যক্ত ও আশ্রয়হীন মানুষের ঠিকানায় রূপ নিয়েছে।
ঘটনার প্রায় এক বছর পর ভবনটির সামনে হঠাৎই ঝুলছে একটি ব্যানার—‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’। একইসঙ্গে শুরু হয়েছে পরিচ্ছন্নতার কাজ, তবে কে এই উদ্যোগ নিয়েছে, তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না। শুক্রবার (২৫ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, একটি দল নিচতলায় জমে থাকা নোংরা পানি সরাচ্ছে, কয়েকজন ভবনের ময়লা পরিষ্কার করছেন। ‘নসু’ নামে ভবনে থাকা এক ভাসমান ব্যক্তি জানান, তিনিসহ ১২ জন শ্রমিক দৈনিক মজুরিতে কাজ করছেন এবং কাজের নির্দেশ দিচ্ছে ‘ছাত্ররা’। এই ভবনের পুঙ্খানুপুঙ্খ লুণ্ঠনের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “সব কিছুই নিয়ে গেছে মানুষজন—টোকাই, মাদকাসক্ত এমনকি ভদ্রলোকও।”
২০১৮ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনার উদ্বোধনকৃত আওয়ামী লীগের এই দশতলা ভবনটির নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা। মূলত এটি ছিল দলের কেন্দ্রীয় কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর পর ভবনটি ভাঙচুরের শিকার হয় এবং আগুনে পুড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই থেকেই ভবনটি পড়ে আছে কার্যত নিস্তব্ধ ধ্বংসাবশেষ হয়ে। এখন পরিচ্ছন্নতার আড়ালে ভবনটি নতুন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটি নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। কে করছে, কেন করছে—সবই জড়ানো এক ধোঁয়াশায়। গুলিস্তানের এই রাজনৈতিক প্রতীক এখন যেন কালের সাক্ষী এক নির্বাক ভবন।