
দুই বছর ধরে চলমান গাজা যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবনায় হামাসের আংশিক সম্মতিতে বিশ্বজুড়ে আশাবাদের সঞ্চয় হয়েছে। এ ঘটনাকে যুদ্ধ বন্ধের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে হামাস জানায়, জিম্মিদের মুক্তি দিতে এবং গাজা শাসনের দায়িত্ব অন্য ফিলিস্তিনিদের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত। তবে প্রস্তাবের অন্য কিছু দিক নিয়ে এখনো আলোচনা প্রয়োজন। হামাসের এই সাড়াকে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বনেতারা।
হোম বিদেশ
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসের সাড়া: কী বলছেন মোদি, ম্যাক্রোঁ, আনোয়ার ইব্রাহিমসহ বিশ্বনেতারা
টিডিসি ওয়ার্ল্ড
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১০ PM
facebook logotwitter logo
মোদি, ম্যাঁক্রো, আনোয়ার ইব্রাহিম
মোদি, ম্যাঁক্রো, আনোয়ার ইব্রাহিম © সংগৃহীত ছবি
দুই বছর ধরে চলমান গাজা যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবনায় হামাসের আংশিক সম্মতিতে বিশ্বজুড়ে আশাবাদের সঞ্চয় হয়েছে। এ ঘটনাকে যুদ্ধ বন্ধের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে হামাস জানায়, জিম্মিদের মুক্তি দিতে এবং গাজা শাসনের দায়িত্ব অন্য ফিলিস্তিনিদের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত। তবে প্রস্তাবের অন্য কিছু দিক নিয়ে এখনো আলোচনা প্রয়োজন। হামাসের এই সাড়াকে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বনেতারা।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া:
হামাসের ঘোষণার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘হামাসের সদ্য প্রকাশিত বিবৃতির ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি, তারা স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরাইলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা জিম্মিদের নিরাপদে এবং দ্রুত মুক্ত করতে পারি।’
চলমান হামলা ও সংঘাতের মধ্যে জিম্মিদের মুক্ত করা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া এক ভিডিওতে ট্রাম্প শান্তি চুক্তির আলোচনায় সহায়তার জন্য কাতার, তুরস্ক, সৌদি আরব, জর্ডান, মিশরসহ কয়েকটি রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
হামাসের জবাবের পর ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় তাৎক্ষণিকভাবে বোমাবর্ষণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন এবং বলেন, হামাস এখন ‘স্থায়ী শান্তি’র জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, ট্রাম্পের এসব মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্য ছিল ‘অপ্রত্যাশিত’।
পরবর্তীতে নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, তারা ট্রাম্প পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার আওতায় বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার রাত থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার মাত্রা কমে এসেছে। তবে শনিবার দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসিতে একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় দুই শিশু নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
কাতার
গাজা বিষয়ে মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা কাতার হামাসের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা এসময় জানিয়েছে হামাস ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে এবং বন্দিমুক্তির পরিকল্পনার আওতায় সব বন্দি ছাড়তে প্রস্তুত’।
মিশর
মিশর একে ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিলিতভাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাজ করবে বলে আশাব্যক্ত করেছে।
তুরস্ক
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হামাসের সাড়াকে ‘গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ
টেলিগ্রামে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ বলেছেন, হামাসের অবস্থান অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর মতও প্রতিফলিত করে। তারা আরো জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে তারা ‘দায়িত্বশীলভাবে’ আলোচনা করেছে।
জাতিসংঘ
মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হামাসের সাড়ায় উৎসাহিত হয়ে উভয় পক্ষকে ‘এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গাজার মর্মান্তিক সংঘাতের অবসান ঘটাতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘটনায় ট্রাম্পের ‘নেতৃত্ব’ প্রশংসা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি, এই ঘটনাকে ‘জিম্মিদের মুক্তি এবং শান্তির পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে অভিহিত করেছেন। এসময় তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘ভারত ‘স্থায়ী ও ন্যায়সঙ্গত শান্তি’র প্রচেষ্টায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
মালয়েশিয়া
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘এই শান্তি পরিকল্পনা নিখুঁত নয় এবং এর অনেক কিছুতেই আমরা একমত নই। কিন্তু এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন রক্ষা করা।” তিনি বলেন, আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর সমর্থন মানে এই নয় যে তারা পরিকল্পনার সব কিছুতে একমত, বরং এটি রক্তপাত থামানোর যৌথ পদক্ষেপ।
ফ্রান্স
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘বন্দিমুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি এখন নাগালের মধ্যে। হামাসের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন জরুরি।‘ তিনি জানান, ফ্রান্স জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
জার্মানি
চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ একে ‘শান্তির সেরা সুযোগ’ উল্লেখ করে বলেন, জার্মানি ট্রাম্পের উদ্যোগকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে বলে জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, হামাসের সাড়াকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ এবং সব পক্ষকে ‘এই চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদসূত্র: আল জাজিরা