বাংলাদেশের আকাশে উঁকি দিচ্ছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট, বদলে যেতে পারে ডিজিটাল ভবিষ্যৎ

ঢাকা, ২৪ মে ২০২৫:
এক সময় গ্রামের ইন্টারনেট বলতে বোঝাত “এজ” (EDGE) কানেকশন আর ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষা। এমনকি শহরেও অনেকেই দিনের পর দিন ভুগেছেন ধীরগতির ব্রাউজিং আর “বাফারিং”-এর যন্ত্রণায়। কিন্তু সেই দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে Starlink—স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা।

স্টারলিংক কী?
এলন মাস্কের SpaceX কোম্পানি চালু করেছে Starlink, যা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে সক্ষম। এটি বিশেষভাবে কার্যকর যেখানে প্রচলিত ব্রডব্যান্ড পৌঁছায় না—যেমন দুর্গম পাহাড়, নদীবেষ্টিত অঞ্চল বা সীমান্তবর্তী গ্রাম।

বাংলাদেশে যাত্রা শুরু
সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করেছে Starlink। ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় পরীক্ষামূলক সংযোগ চালু হয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

Wi-Fi ছাড়াই চলবে ইন্টারনেট
Starlink-এর সবচেয়ে বড় সুবিধা—এটি সম্পূর্ণ তারবিহীন। রিসিভার ডিশের মাধ্যমে সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট পাওয়া যায়, ফলে কোনো ফাইবার অপটিক লাইন বা মোবাইল টাওয়ারের প্রয়োজন নেই।

দাম ও প্যাকেজ
Starlink বাংলাদেশে দুই ধরনের রেসিডেনশিয়াল প্ল্যান দিচ্ছে:

  • Residential: মাসিক ৬,০০০ টাকা, গতি ৫০–৩০০ Mbps, আনলিমিটেড ডেটা
  • Residential Lite: মাসিক ৪,৮০০ টাকা, গতি ৫০–১০০ Mbps

সংযোগের জন্য এককালীন স্টার্টার কিটের মূল্য ৪৭,০০০ টাকা, যার মধ্যে রিসিভার, রাউটার ও মাউন্টিং কিট রয়েছে।

ব্যবহার সীমাবদ্ধতা ও নীতিমালা
Starlink-এর হোম প্যাকেজ কেবল পারিবারিক ব্যবহারের জন্য। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল বা কারখানায় ব্যবহারের জন্য আলাদা কর্পোরেট প্ল্যান প্রয়োজন। রাউটার একসাথে সর্বোচ্চ ১২৮টি ডিভাইস সংযুক্ত রাখতে সক্ষম।

Wi-Fi কভারেজ ও ব্যান্ডউইথ ব্যবস্থাপনা
প্রতি ইউনিটে প্রায় ১৮৫–২৩০ স্কয়ার মিটার পর্যন্ত Wi-Fi কভারেজ পাওয়া যায়। বড় বাসায় অতিরিক্ত এক্সটেন্ডার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া, Bandwidth Smart Distribution প্রযুক্তি ব্যবহারে সব ধরনের ইউজার ব্যালান্সড ইন্টারনেট পায়।

ডিজিটাল বৈষম্য ঘোচানোর হাতিয়ার?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে এখনও অনেক জায়গায় ফাইবার অপটিক পৌঁছায়নি, Starlink হতে পারে প্রযুক্তিগত বৈষম্য দূর করার কার্যকর মাধ্যম। এটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তাদের জন্য অনলাইন কার্যক্রমে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

চ্যালেঞ্জও রয়েছে
উচ্চমূল্য, ডিভাইস সীমাবদ্ধতা ও প্রাথমিক প্রযুক্তিগত সীমা এখনও এই সেবার প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে এবং খরচও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

শেষ কথা
Starlink এখন শুধু বিদেশি প্রযুক্তি নয়, বাংলাদেশের বাস্তবতাতেও তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। Wi-Fi-এর বিকল্প নয়, বরং নতুন এক যুগের সূচনা বলা যেতে পারে।

এটাই হয়তো সেই “নতুন বাংলাদেশ”, যেখানে প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যাবে ডিজিটাল কানেকশন—আকাশপথে, সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *