
নিউ ইয়র্ক, ২৬ মে: অর্থনীতিবিদদের উপদেশ উপেক্ষা করে রাজনৈতিক মতাদর্শ, ব্যক্তিগত অনুভূতি কিংবা হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে—এমন সতর্কতা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক শুল্কনীতি নিয়ে এই উদ্বেগ ফের নতুন করে সামনে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এতে শুধু মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাই তৈরি হয়নি, বাড়ছে মন্দার ঝুঁকিও। প্রতিক্রিয়ায় অন্যান্য দেশও পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় বিশ্ববাণিজ্যে অনিশ্চয়তা আরও গভীর হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে ষাটের দশকের পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থার মুখোমুখি করতে পারে, যেখানে একসঙ্গে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব বেড়ে যায়—যা অর্থনীতিতে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ নামে পরিচিত।
ইতিহাসে এমন উদাহরণ আছে বহুবার
এই ধরনের সিদ্ধান্ত নতুন কিছু নয়। ইতিহাস বলছে, অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনেক সময় রাষ্ট্রকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৮৩২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন রাজনৈতিক মতাদর্শ ও ব্যক্তিগত বিরাগ থেকে ‘সেকেন্ড ব্যাংক অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’-এর সনদ নবায়ন ভেটো করেন। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকীয় ব্যবস্থার অভাবে যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক আর্থিক সংকটে পড়ে।
একইভাবে, ১৯২৫ সালে ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলও অর্থনীতিবিদ জন মেইনার্ড কেইনসের পরামর্শ উপেক্ষা করে পুনরায় গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে ব্রিটেনের রপ্তানি খাত দুর্বল হয়, শ্রমবাজারে সংকট দেখা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত দেশটি ১৯৩১ সালে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ত্যাগে বাধ্য হয়।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির শঙ্কা
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের বর্তমান শুল্কনীতি সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা তৈরি করছে। যদি অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও গবেষণাভিত্তিক পরামর্শকে অগ্রাহ্য করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে এই নীতিগুলো বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে তা শুধু মার্কিন অর্থনীতিই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও বড় ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
অর্থনীতিতে সুস্থ ও স্থিতিশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজন তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশল। ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে, যখন নেতৃত্ব শুধুমাত্র আদর্শ কিংবা আবেগের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তা দুর্ভোগ ও সংকট ডেকে আনে।
বিশ্লেষকদের ভাষায়, “ট্রাম্পের শুল্কনীতি যদি অনড়ভাবে এগিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে যেখানে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় একসঙ্গে বাড়বে।”
বিশ্ব আজ সেই পুরোনো ভুলের সামনে দাঁড়িয়ে—এবং এখনই সময় সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার।
(সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন)